সিলেটমঙ্গলবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. খেলা
  9. গণমাধ্যম
  10. জবস
  11. জাতীয়
  12. জোকস
  13. টপ নিউজ
  14. তথ্যপ্রযুক্তি
  15. দেশে বাইরে

দুর্নীতি কখনো দেখা যায়, আবার দেখা যায় না

পুর্বের আলো অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : নভেম্বর ৬, ২০২২
Link Copied!

দুর্নীতি কখনো দেখা যায়, আবার দেখা যায় না

সুধীর সাহা.মানুষের রিপু খুবই শক্তিশালী ও সক্রিয়। অন্যদিকে, সংযম ও শুভবুদ্ধি জাগিয়ে দিতে কাজ করে মন। এ দুই বিপরীত স্বভাবের মধ্যে চলে অবিরাম যুদ্ধ। অশুভ শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারে যে মন, সে-ই তো সভ্য মন। কেননা, অশুভ শক্তিকে দমিয়ে রাখাটাই সভ্যতার মাপকাঠি

বৈষম্য বড় সাংঘাতিক শব্দ বর্তমান দুনিয়ায়। দিন দিন বৈষম্য বেড়েই চলেছে। তবে পাল্লা দিয়ে নয়, রীতিমতো লাফিয়ে লাফিয়ে সবার আগে আগেই বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে আমাদের দেশে। প্রতিবেশী ভারতের অবস্থাও আমাদের মতো। সর্বাধিক বৈষম্যের দেশ হিসেবে খ্যাতি মিলছে আমাদের ধীরে ধীরে।

বৈষম্যের সূচকটি ২০১৪-তেও এতটা ভয়াবহ ছিল না। ২০১৮, ২০১৯, ২০২০-এ এর আকার ধারণ করেছে ভয়াবহ। ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি রিপোর্ট তেমনটাই বলছে। ২০২২ সালে রিপোর্টের সারাংশ হলো—শীর্ষ ১০ ও ১ শতাংশ পরিবারের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জাতীয় আয়ের যথাক্রমে ৫০ ও ২০ শতাংশ। অন্যদিকে, জাতীয় আয়ের ১৫ শতাংশের ওপর বেঁচে আছে নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক রিপোর্টও হূদয়বিদারক।

করোনাকালে বিশ্বে প্রতি ৩০ ঘণ্টায় একজন ব্যক্তি ধনকুবেরে পরিণত হয়েছেন। উলটো দিকে, ১০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছেন প্রতি ৩৩ ঘণ্টায়। একজন ট্রেনে-বাসে-রাস্তায় কারো মানিব্যাগ ছিনতাই করলে, কারো গলার হার কেড়ে নিলে, কারো বাড়িতে চুরি করলে একেবারে হইচই পড়ে যায়। এসব অবশ্যই নীতিহীন কাজ।

দুর্নীতি কখনো দেখা যায়, আবার দেখা যায় না

তবে এদেরকে চিহ্নিত করে জেলে পাঠানো সরকারের জন্য খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায় না। অন্যদিকে, কিছু হোয়াইট কালার সামাজিক প্রভাবশালী মানুষ অগণিত গরিব অশিক্ষিত মানুষকে নানা কায়দায় ঠকিয়ে ধনরত্নের প্রাসাদে বসে আলোকিত মঞ্চে পা দোলাচ্ছেন। আর তাদেরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশনেতারা। এই সমগ্র চিত্রনাট্য তাদের চোখে ঠিক দুর্নীতি হয়ে ধরা দেয় না। কেননা, শত কোটি টাকা চুরি হলেও তা প্রত্যক্ষ চুরির সংজ্ঞায় পড়ে না।

কোনো মন্ত্রী, এমপি কত টাকা অসত্ উপায়ে আত্মসাত্ করেছেন, কোথায় টাকা রেখেছেন, কী করে ধরা পড়লেন—এরকম সংবাদ আমাদের প্রথমে আকৃষ্ট করে। আমরা কেউ উল্লসিত হই, কেউ বিব্রত হই; কেউ যুক্তি দিয়ে দুর্নীতির দায় লঘু করার চেষ্টা করি এই বলে যে, আগের রাজনৈতিক জামানাতেও অনেক দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমানের কালজয়ী আদর্শ বুঝি—তুমি অধম, তবে আমিই-বা অধম হব না কেন? এমনটা ভাবার কারণ, অধম হওয়াটা আমাদের দেশে বোধহয় একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। একসময় যে দেশে ব্যতিক্রম মহাপুরুষ জন্মাতেন, এখন সেখানে অধম মহাপুরুষ জন্মায়।

চৌর্যবৃত্তি, নীতি-দুর্নীতি চিরকালীন বৃত্তি হিসেবে সমাজে সবসময়ই প্রচলিত ছিল। চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা। যারা চুরি করে, আর যারা চোর ধরে—তারা পরস্পরকে শত্রু মনে করে না। বিষয়গুলো অনেক দিনের অভ্যাস। বর্তমানে হয়তো ব্যাপকতা বেড়েছে একটু, এই যা। ছেলেবেলায় খুব জনপ্রিয় ফিল্ম দেখতে গেলে টিকিট কাউন্টারে দেখতাম, ঝোলানো আছে হাউজফুল নোটিশ।

আর ফিরে যাওয়ার পথে কেউ একজন কানের কাছে গলা নামিয়ে জিগ্যেস করত—টিকিট লাগবে? সুতরাং এমন ধরনের নীতি-দুর্নীতির হিসাবনিকাশ সবসময়ই ছিল। তবে পার্থক্য হলো, এখন অবস্থানটা পালটে গেছে। বড় কাজটাই এখন দুর্নীতি, আর অসহায়তুল্য ছোট্ট কাজটিই নীতি হিসেবে টিকে আছে। সেখানে একসঙ্গে বাড়ছে দরিদ্রতা ও প্রাচুর্য্যে পরিপূর্ণ কুলীন শ্রেণি।

১৯৭৪ সালে মনের কষ্টে বঙ্গবন্ধু ঢাকার এক সমাবেশে বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য কম্বল এনেছিলাম, পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ভিক্ষা করে। হিসেব অনুযায়ী আমার ভাগেও একটি কম্বল থাকার কথা। কিন্তু লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ শীতে কম্বল পাচ্ছে না, লুটেরা খেয়ে ফেলেছে সবকিছু।

ভারতের রাজীব গান্ধী তখন ক্ষমতায়। কালাহান্ডিসহ ওড়িশার দুর্দশা কমাতে কেন্দ্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ ঢালা হয়। বাস্তব পরিবর্তনটা স্বচক্ষে দেখতে ১৯৮৫ সালে একদিন কালাহান্ডি যান রাজীব গান্ধী। যা দেখলেন, তাতে ভারাক্রান্তই হলো তার মন। জনসমক্ষে মন্তব্য করলেন, গরিব এবং পিছিয়েপড়া মানুষের জন্য সরকার যে টাকা পাঠায়, তার মাত্র ১৫ পয়সা তাদের পর্যন্ত পৌঁছায়; বাকি ৮৫ পয়সা স্রেফ লুট হয়ে যায়।

এ বাস্তবতার বাইরে কখনো এসব দেশের মানুষ যেতে পারেনি। এসব দেশে নেতা তৈরি হয়ে যায় নীতি-দুর্নীতির কোল ঘেঁষে। দুর্নীতির জোরটাই সেখানে বেশি। নেতা শাসক হলে তৈরি হয়ে যায় তার অনুচর ও স্তাবক। স্তাবকরা শাসককে তখন ঘুষ দিতে শুরু করে নানাভাবে। দুর্নীতির সূত্রপাত সেখান থেকেই। এসব আজকের উপাদান নয়। হোমারের মহাকাব্যে দেবতাদের ঘুষ নেওয়া-দেওয়ার কথা আছে। ছলচাতুরি-কপটতার বর্ণনা রামায়ণ এবং মহাভারতেও প্রচুর।

প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে অপরাধীকে হত্যার সময় যেন কম কষ্ট হয়। সে কারণে জল্লাদকে ঘুষ দেওয়ার চল ছিল। হাজার হাজার বছর ধরেই সারা পৃথিবীতে শাসকদের সন্তুষ্ট রাখতে এবং অন্যের চেয়ে কিছু বেশি সুবিধা পেতে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে গড়িয়ে গিয়েছে ঘুষ-দুর্নীতি। ঘুষ-দুর্নীতি ঠিক আজকের উপাদান নয়; অনাদিকাল থেকেই এর অবস্থান লক্ষ করা গিয়েছে।

দুর্নীতি তার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ থাবা দিয়েই চলেছে মানুষের মধ্যে। তার কোনোটা হিসাবে আসে, আবার কোনোটা হিসাবের বাইরে থেকে যায়। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়মিত দেরিতে অফিসে আসে কিংবা আগে বেরিয়ে যায়, কাজে ফাঁকি দেয়, ট্যুরে না গিয়ে কিংবা কম সময় থেকে বেশি সময়ের বিল জমা দেয়, জিনিস কেনার সময় কমিশন নেয়— তারা সবাই কিন্তু দুর্নীতির সঙ্গেই বসবাস করে।

কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা হয় না দুর্নীতিবাজ হিসেবে। নব্বইয়ের দশক থেকেই শুরু হয়েছে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশাল অঙ্কের টাকা ডোনেশন দিয়ে ভর্তির প্রবণতা। এসব সবার চোখের সামনেই তো ঘটছে। তবে কেউ তাকে দুর্নীতি বলে মেনে নিতে নারাজ।

সাধারণভাবে দুর্নীতি বলতে আমরা বুঝি, বেআইনি টাকা লেনদেন এবং অসদুপায়ে টাকার মালিক হওয়া। এটাই দুর্নীতির জনপ্রিয় সংজ্ঞা। কেননা, এসব দুর্নীতির নেতা ক্ষমতাবান, সম্মানিত, বহু পরিচিত ব্যক্তি— যাদের কীর্তি প্রকাশ পেলে তা সাধারণ মানুষের নিকট সমাজের উঁচুুতলার স্ক্যান্ডাল হিসেবে খুবই উপভোগ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, নীতি থেকে দুর্নীতির দূরত্ব কতটুকু? নীতির সঙ্গে আইনের, না নৈতিকতার সম্পর্ক বেশি? সাধারণভাবে এটা হয় যে, আইনবিরোধী কাজ নৈতিকতাবিরোধীও বটে।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। পরাধীন ভারতে মহাত্মা গান্ধী ‘আইন অমান্য আন্দোলন’ করেছিলেন; ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তার পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ভাই-বোনের প্রতি। এসব আইন অমান্য করা ছিল ঠিকই; কিন্তু এগুলোকে কী নৈতিকতাবিরোধী বলতে পারি? এসব আইনভাঙা আন্দোলনকে অনৈতিক মনে করা হয় না। কেননা, এসব আন্দোলন করা হয় দেশ ও সমাজের কল্যাণের স্বার্থে।

ধরুন, কোনো শিল্পপতি দেশের কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে ডোনেশন দিয়ে বসলেন মোটা অঙ্কের। এমন রাজনৈতিক দানের কোনো হিসাব থাকে না কোথাও। কেউ জানতে পারে না, এত টাকা রাজনৈতিক দলকে কে-বা কারা দিল। তা জানার কোনো পথও খোলা নেই। প্রশ্ন থাকছে, লেনদেনের পরে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো রাজনৈতিক দল কীভাবে দাতার প্রত্যাশা পূরণ করে।

শিল্পপতি তার দানের বিনিময়ে সরকার থেকে কী সুবিধা আদায় করছে, তা সাধারণ মানুষ কখনো জানতে পারছে না। দেশের অর্থনীতি একদিকে যত ডুবছে, তত ফুলে-ফেঁপে উঠছে রাজনীতির কোষাগার। এ কাজে অন্যান্যের ছাপিয়ে যায় শাসক দল। এসব ক্ষেত্রে সব দল যা আয় করে, শাসক দল একাই তার কয়েক গুণ আয় করতে পারে। এমন আয়কে কেউ দুর্নীতির সংজ্ঞায় নিয়ে আসতে চায় না।

অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড বলেছিলেন—ব্যাংকের যদি আপনার কাছে কয়েক হাজার টাকা পাওনা থাকে, তবে তা আপনার সমস্যা। কিন্তু ব্যাংকের যদি আপনার কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকে, তবে তা ব্যাংকের সমস্যা। সামান্য টাকার জন্য ব্যাংক ঠিকই আপনার জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে।

কিন্তু আপনি যদি ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বেমালুম চেপে যান, তাহলে আপনার নয়, বরং ব্যাংকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তার পরও এসব বড় বড় ঋণখেলাপির কাজকে দুর্নীতির বাঁধনে বেঁধে দিতে সম্মত নয় সমাজ। দুর্নীতি নিয়ে একটি মজার খেলা জমেছিল বিশ্ব ব্যাংক এবং বাংলাদেশ নিয়ে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ্ব ব্যাংক অভিযোগ তুলেছিল।

কারণ তাদের হিসাবে অবৈধ লেনদেনের একটি পরিকল্পনা হয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। কেননা, বাংলাদেশের দুর্নীতি আইনে প্রকৃত অর্থে অর্থের লেনদেন না হলে দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগ করা যায় না।

মানুষের রিপু খুবই শক্তিশালী ও সক্রিয়। অন্যদিকে, সংযম ও শুভবুদ্ধি জাগিয়ে দিতে কাজ করে মন। এ দুই বিপরীত স্বভাবের মধ্যে চলে অবিরাম যুদ্ধ। অশুভ শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারে যে মন, সে-ই তো সভ্য মন। কেননা, অশুভ শক্তিকে দমিয়ে রাখাটাই সভ্যতার মাপকাঠি।

যে ব্যক্তি, সমাজ, শাসক, প্রতিষ্ঠান যত বেশি সংযমের পরিচয় বহন করে, সে বা তারা তত সভ্য। আমরা এমন প্রতিযোগিতায় কতটা পিছিয়ে আছি, সে হিসেব কি কখনো করছি? তা করছি না বলে, দায়ও এড়াতে পারছি না। আলোহীন পৃথিবীতে একসময় নির্বংশ হয়েছিল বিরাটকায় ডাইনোসরও; সভ্য জগেক অন্ধকারে ঢেকে রাখলে পুরো মানবসভ্যতা সেই ধ্বংসের অভিমুখে একদিন এগিয়ে যাবে না তো?

লেখক :কলাম লেখক

  • এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।