কেমন আছি আমরা
সাবিহা নাজনীন
ডিজিটালের বদৌলতে অনেক ভালো আছি আমরা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বড় বড় সেতু, উত্সব-আমেজ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সবকিছু যেমন হাতের মুঠোয় তেমনই সহজ। এত সব সহজের মধ্যে ফাঁক বুঝে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের জীবনযাপন। তারা নিজেদের এবং পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে অনেক মাথা খাটিয়ে শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে আয় বুঝে ব্যয় করেন।
এর মধ্যে আবার হু হু করে বেড়ে চলা দ্রব্যের মূল্যের চাপ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। মানুষ যেই মুহূর্তে করোনার কারণে সরকারঘোষিত লকডাউনের ভয়াবহ অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চিন্তা-ভাবনা করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। সময়টা যেন দিন দিন ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে।
বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত দুই বছরে শুধু চালের দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। ৪০ টাকার চাল এখন ৬০ ছুই ছুই। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যুগটা যেন আবার সন্নিকটে। চালের সঙ্গে ডাল শব্দটা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তবে গত পাঁচ বছরে ডালের দাম বেশ স্থিতিশীল দেখা গেছে। অন্যদিকে ভোজ্য তেলের দাম গত পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ভোজ্য তেলের দামের গ্রাফ এত উঁচুতে চলে গিয়েছে যে, তার প্রভাব পড়েছে বাকি সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যে।

মাছে-ভাতে বাঙালি হলেও আমরা আমিষের চাহিদা মেটাই ব্রয়লার মুরগি আর ব্রয়লারের ডিম দিয়ে। সেই ডিমের হালি কখনও ৪০ পেরিয়ে যায় আর ব্রয়লারের দাম কখনো কেজিতে পেরোয় ২০০ টাকা। যা সব শ্রেণির মানুষের কপালে ভাঁজ পড়ার অন্যতম কারণ। এদিকে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ পর্যন্ত। এসব পণ্য ছাড়াও মাছ-মাংস, সবজি, ফল, মসলাসহ প্রায় সব রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
দিনমজুর থেকে শুরু করে চাকরিজীবী সবাই যেন এক গভীর অনিশ্চয়তার ভেতর দিন যাপন করছে। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাজার থেকে ব্যাগ হাতে মলিন বদনে আবার বাড়ি ফিরে যায়। গত দিন দেখি একজন অনেকক্ষণ ধরে বাজারে ঘুর ঘুর করছেন, আর দাম শুনছেন; কিন্তু কোনো কিছু কিনছেন না।
তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। পরিবারের একমাত্র কর্মজীবী তিনি। তার আয়ের প্রায় ৯০-৯৮ শতাংশ চলে যায় বাজার করতে। এরপর দুই বাচ্চার পড়াশোনা, অসুস্থ মায়ের চিকিত্সার জন্য কোথা থেকে টাকা জোগাড় হবে—সেই চিন্তা তাকে রীতিমতো গ্রাস করে ফেলছে। এ চিত্র যেন এখন প্রায় ঘরে ঘরেই।
দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি খেটে খাওয়া মানুষের পারিশ্রমিক। সীমিত আয়ের পেশাজীবীদের বেতনও একই জায়গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে। নানামুখী ব্যস্ততার ভিড়ে কেউ কি খোঁজ নিয়েছে—কেমন আছে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ? জনগণের খারাপ থাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের টনক নড়বে কি কখনো?
কেউ কি জানতে চাইবে—কেমন আছে আমজনতা, কীভাবে দিনাতিপাত করছে সাধারণ জনগণ, কেমন আছি আমরা? নাকি একসময়ের পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি, বেগুন ছাড়া বেগুনির মতো তেল ছাড়া তরকারি এবং চাল ছাড়া ভাত খাওয়ারও বিকল্প কোনো পদ্ধতি বের হবে!
কে করবে সমাধান? কার কাছে আমাদের ভালো-খারাপ থাকার অভিযোগ করব?
লেখক :শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
