ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ জুন ২০২৪

কেন বারবার ডুবছে সিলেট?

পুর্বের আলো অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : জুন ১৮, ২০২৪
Link Copied!

কেন বারবার ডুবছে সিলেট?

টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। সিলেট নগরী ও সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকা এখন পানির নিচে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারি-গোয়াইন নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী সাত দিন ভারিবৃষ্টি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে আবহাওয়া দফতর বলছে, বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এ ছাড়া পুরো বর্ষা মৌসুম সামনে পড়ে রয়েছে। এ অবস্থায় সিলেট অঞ্চলে আরও কয়েকবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, ২০২২ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ওই বন্যায় দুই জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে টানা প্লাবিত হচ্ছে সিলেট অঞ্চল। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে অতীতেও অতি ভারি বৃষ্টিতে এত ক্ষতি হয়নি, এখন কেন বারবার ডুবছে সিলেট?

কেন বারবার ডুবছে সিলেট?

প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের প্রতিনিধির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার এবং জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের তিন শিক্ষক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সিলেটে ঘন ঘন বন্যার কারণ ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন।

আরও পড়ুন: জলমগ্ন সিলেটবাসীর জন্য আরও বড় দুঃসংবাদ

সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মো. মুন্না বলেন, সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যার কারণ আসলে দুই ধরনের। প্রথমটি প্রাকৃতিক ও দ্বিতীয়টি কৃত্রিম।

এই শিক্ষকের মতে,
প্রকৃতির বিরূপ আচরণ যেমন দায়ী তেমনি আমাদের ভূমিকাও নেহায়েত কম নয়। ভারতের মেঘালয়ে অতি বৃষ্টি থেকে যে পানি আসে, সেটি বেশির ভাগই সুরমা ও কুশিয়ারা বয়ে নিয়ে যায়। তবে বর্তমানে বেশি পরিমাণ পানি প্রবাহের সক্ষমতা আমাদের নদীগুলোর নেই। এর মূল কারণ নদীর নাব্যতা সংকট। এ ছাড়া কৃত্রিম কারণের মধ্যে রয়েছে- অপরকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা। এর ফলে সম্প্রতি সিলেট অঞ্চল ঘন ঘন বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।

তবে সুষ্ঠু নদী ও বন্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করেন এই শিক্ষক।

আরও পড়ুন: রাতে অতিভারি বৃষ্টির শঙ্কা, ডুবতে পারে সিলেট-সুনামগঞ্জের নতুন এলাকা

এদিকে জলাধার এবং প্লাবন ভূমি ভরাট করে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখিন হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, সিলেট শাখার কোষাধ্যক্ষ এবং শাবিপ্রবির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৌশিক সাহা।

তিনি বলেন, প্রতিবছর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বরাক উপত্যকায় অতি বৃষ্টি হয়ে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে অতি বৃষ্টির পানি সিলেট অঞ্চলের নদী-নালা, হাওর, নিম্নাঞ্চল দিয়ে বঙ্গপোসাগরে প্রবাহিত হয়। তবে গত কয়েক বছরে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট, বর্জব্যবস্থাপনার অভাব, অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরিসহ বিভিন্ন কারণে এ অঞ্চলে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তার মতে,
বন্যা ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে যেকোনো শহরের পাশে মৌসুমি প্লাবন ভূমি রাখা খুব জরুরি। অথচ সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে প্রাকৃতিক প্লাবনভূমিতে বসতি স্থাপন ও অপরিকল্পিত নগরায়ন করা হয়েছে। শহরগুলোতে পুকুর ভরাট করে ফেলা ও খোলা জায়গার অভাবের কারণে বৃষ্টির পানি সাময়িকভাবে ধারণের পথ বন্ধ হয়েছে। এই পরিস্থিতি উন্নতির জন্য টেকসই বন্যা প্রতিরোধী পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন এই শিক্ষক।

আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ

শাবিপ্রবির জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা আয়শা আক্তার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নদীর নাবত্যা ফেরানো এবং বিভিন্ন খাল এবং জলাধার সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত বেশি হবে, স্বাভাবিক। তবে বৃষ্টি বেশি হলেই যে বন্যা হবে তা স্বাভাবিক বিষয় নয়। সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে ভৌগলিক অবস্থানে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সিলেটে বেশি বৃষ্টি হয়। সিলেটের বাইরে মেঘালয়েও ভারি বৃষ্টিপাত লক্ষণীয়। মেঘালয় উজানের দেশ হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চল সিলেটের ওপর দিয়ে ওই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পানি প্রবাহিত হয়। ভারি বৃষ্টিতে পলিমাটি বয়ে এসে সিলেট অঞ্চলের নদীগর্ভে জমা হয়। এতে নদীগুলোর নাব্যতা কমে গিয়ে সংকুচিত হচ্ছে। তাই ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি উপচে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: সিলেটে বাড়ছে পানি: ঝুঁকিতে বরইকান্দি সাব-স্টেশন

তিনি আরও বলেন,
ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলে আগের চাইতে নগরায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরের ময়লাগুলো ছড়াগুলোতে মিশছে। নিয়মিত এই ছড়া পরিষ্কার না করায় বর্ষার পানি দ্রুত নদীতে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মিত এই ছড়া ও নদীগুলো পরিষ্কারের অভাবে পানি স্বাভাবিকভাবে না নামতে পারায় জলাবদ্ধ অবস্থা দীর্ঘ হচ্ছে।

এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানে ও বন্যা মোকাবিলায় নতুন করে প্রশাসনকে ভাবতে হবে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষক ও গবেষকরা।

এরকম চাপের ম্যাচ আমি আগে খেলিনি: শান্ত

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।